বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪১ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম ডেস্ক:
কিছুদিন ধরে আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত উপপ্রধানমন্ত্রী মোল্লা আবদুল গনি বারাদারকে প্রকাশ্যে দেখা না যাওয়ায় তার মৃত্যুর গুজব ডালপালা মেলে। তালেবান নেতাদের মধ্যে মতবিরোধের অসমর্থিত খবরও আসতে থাকে। এরপরে বৃহস্পতিবার এক ভিডিও সাক্ষাৎকারে হাজির হয়ে তালেবানের অন্য অংশের সঙ্গে বিবাদে নিজের আহত হওয়া বা মৃত্যুর খবর অস্বীকার করেছেন বারাদার।
তালেবানের এই সহ-প্রতিষ্ঠাতা বেশ কয়েকদিন ধরেই লোকচক্ষুর আড়ালে ছিলেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি। প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে বারাদারের সঙ্গে প্রভাবশালী হাক্কানি নেটওয়ার্কের অনুগতদের মধ্যে ঝগড়া হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছিল আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। সাক্ষাৎকারে বারাদার তালেবানের ভেতর অন্তর্দ্বন্দ্বের খবর উড়িয়ে দিয়েছেন। ‘না, এটা সত্য নয়। আমি ঠিক আছি, সুস্থ আছি। আমি কাবুলের বাইরে ছিলাম, ভুয়া খবর অস্বীকার করতে ইন্টারনেটে ঢোকারও উপায় ছিল না,’ আহত হয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন নতুন প্রশাসনের ভারপ্রাপ্ত এ উপপ্রধানমন্ত্রী।
দোহায় অবস্থিত তালেবানের রাজনৈতিক কার্যালয় বারাদারের সাক্ষাৎকারের ছোট এই ভিডিও ক্লিপটি টুইটারে প্রকাশ করে। ভিডিওতে তালেবানের সহ-প্রতিষ্ঠাতাকে সোফায় রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের হয়ে যিনি সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন তার পাশে বসে থাকতে এবং কাগজ থেকে কিছু পড়তে দেখা গেছে। ‘আল্লাহকে ধন্যবাদ। আমাদের নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক ভালো, আমরা একে অপরকে শ্রদ্ধা করি। আমাদের মধ্যে সম্পর্ক পরিবারের চেয়েও ভালো,’ অন্তর্দ্বন্দ্বের খবর অস্বীকার করে বলেন বারাদার।
বলা হচ্ছে, আফগানিস্তানে জয়ের কৃতিত্ব তালেবানের কোন অংশ পাবে সেই মতবিরোধ থেকেই দ্বন্দ্বের সূত্রপাত। বারাদারের বিশ্বাস এই কৃতিত্ব কূটনীতিরই পাওয়া উচিত যার নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি; অপরদিকে হাক্কানি গোষ্ঠীর সদস্য ও তাদের সমর্থকদের বক্তব্য, লড়াইয়ের মাধ্যমেই এই জয় এসেছে। বারাদার হচ্ছেন প্রথম তালেবান নেতা যিনি যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন। ২০২০ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপ করেন তিনি। এর আগে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের দোহা চুক্তিতে তালেবানের হয়ে তিনিই সই করেছিলেন।
আর শক্তিশালী হাক্কানি নেটওয়ার্ক সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আফগান বাহিনী ও তাদের পশ্চিমা মিত্রদের ওপর চালানো সবচেয়ে ভয়াবহ কিছু হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল। এই গোষ্ঠীটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। হাক্কানি নেটওয়ার্কের নেতা সিরাজুদ্দিন হাক্কানি নতুন সরকারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছেন।
বারাদার লোকচক্ষুর আড়ালে থাকায় তার মৃত্যু নিয়ে জল্পনা হালে পানি পায়। তবে পরে তালেবানের একাধিক কর্মকর্তা বিবিসিকে জানান, বারাদার ওই ঝগড়ার পর কাবুল থেকে কান্দাহার চলে গেছেন। দোহায় অবস্থিত তালেবানের রাজনৈতিক কার্যালয় নতুন ভিডিওটি প্রকাশ করার আগেই কট্টরপন্থি গোষ্ঠীটির সাংস্কৃতিক কমিশনের এক কর্মকর্তা টুইটারে জানান, ‘শত্রুদের অপপ্রচার’ মিথ্যা প্রমাণ করতে বারাদারের একটি সাক্ষাৎকার রাষ্ট্রীয় আরটিএ টিভিতে প্রচার করা হবে।
গত মাসে কাবুলের পশ্চিমা সমর্থিত সরকারকে পরাজিত করে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয় তালেবান, তারপর তারা দেশটিকে ‘ইসলামিক আমিরাত’ হিসেবে ঘোষণা করে। তাদের ঘোষিত অন্তর্বর্তী সরকারের সবাই পুরুষ এবং তালেবানের ঊর্ধ্বতন নেতাদের নিয়েই তা গঠন করা হয়েছে, এদের মধ্যে কয়েকজনকে যুদ্ধ চলাকালে সবচেয়ে ভয়াবহ কিছু আত্মঘাতী হামলার জন্য দায়ী করা হয়।
সূত্র: ডেইলি মেইল